প্রত্যাবর্তন: আরিফ আজাদ
মুসলিমের ঘরে জন্ম নিয়েও আমি হয়ে পড়ি একজন নামকাওয়াস্তে, টাইটেলধারী, নাম সর্বস্ব মুসলমান। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে আমি পথ চলতে থাকি। আমার চারপাশ ঘন কালো অন্ধকারে ঢাকা। তবুও, আমার মনে হয় আমিই ঠিক পথে আছি। বাকিসব ভুল, মিথ্যা…
এরকম অন্ধকারের মধ্যে পথ চলতে চলতে একদিন আমার ঘুম ভাঙে। আমি বুঝতে পারি আমি ঠিক পথে নেই। আমার গন্তব্য যেটা হওয়া উচিত ছিলো, আমি সেই পথ থেকে বিচ্যুত। এতোদিন যেটাকে আমি আলো ভেবে এসেছি, সেটা আসলে আলেয়া। হাওয়া আসলেই নিভে যাবে। যেটাকে আমি জীবন মনে করেছি, সেটা আসলে নরক। এক বিশাল পাপের সাগরে হাঁবুডুবু খেতে খেতে আমি ভুলতেই বসেছি যে, বাঁচতে হলে আমাকে তীরে উঠতে হবে। আমি সেই তীরের সন্ধান না করে উল্টো অহংকার আর দর্পের জন্য পুরোপুরিই ডুবতে বসেছিলাম।
আমি চেতনা ফিরে পাই। চোখ মেলে সামনে তাকাই। আমি শুনতে পাই, অদূর থেকে,
খুব করুণ আর মায়াভরা স্পর্শে কেউ একজন আমাকে ডাকছে। এই ডাক আমার খুব
পরিচিত। আমার খুব চেনা। মনে হচ্ছে, কতো সহস্রবার আমি এই ডাক শুনেছি। কিন্তু
কখনোই এই ডাক আমার কাছে এতো আবেদনময়ী মনে হয়নি। কিন্তু, আজকে কেনো যেন এই
ডাকটাকে আমার খুব আপন মনে হচ্ছে। চির পরিচিত।
আমি অনুভব করলাম, এই ডাক আমার মধ্যে শিহরণ জাগিয়ে যাচ্ছে। আমার বুকের ভেতর,
আমার মনের জগতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কে ডাকে? কে ডাকে আমায়? আমি ছটফট করতে
থাকি। আমি শুনতে পাই, তখনও এক মধুর সুরে, এক নৈসর্গিক ঝঙ্কারে কেউ একজন
আমায় ডেকে চলেছে…
‘হাই-আল- আস-সালাহহহ…’ ‘হাই-আল-আল ফালাহহহহ…’
আমাকে কল্যাণের পথে কেউ একজন ডেকে চলেছে। আমি সম্বিৎ ফিরে পাই। বুঝতে পারি, এ আমার চিরচেনা সুর। শৈশবের প্রথম কোলাহল। কৈশরের প্রথম ইবাদাতের ডাক… আর আমার যৌবন? হায়! আর একটু হলেই ডুবতে বসেছিলাম…
এভাবেই, মুসলিম হয়েও কতো হাজার হাজার মুসলিম যুবক-যুবতী আজ নিজেদের পথ ভুলে গেছে।
হারানো সেই পথ থেকে কেউ ফিরে আসে, কেউ হারিয়ে যায়। যারা ফিরে আসে, কেমন হয়
তাদের গল্পগুলো? জাহিলিয়্যাত থেকে দ্বীনে ফিরে আসা সেই ভাই-বোনদের গল্পগুলো
নিয়েই সংকলন হয়েছে- “প্রত্যাবর্তন”।
বইটি সম্পাদনা করেছেন ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ এবং আরজ আলী সমীপে বইয়ের লেখক শ্রদ্ধেয় আরিফ আজাদ ভাই।
No comments:
Post a Comment